শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৫ - ১৩:২১
সমাজে “দৃষ্টিগত দূষণ”: আমাদের আচরণ কি অন্যের মানসিকতার ক্ষতি করছে?

সমাজের প্রতিটি মানুষই অন্যের জীবনে কোনো না কোনোভাবে প্রভাব ফেলে। কিন্তু সেই প্রভাব সব সময় ইতিবাচক হয় না। সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষজ্ঞরা এক নতুন শব্দ ব্যবহারের দিকে ইঙ্গিত করছেন— “দৃষ্টিগত দূষণ”। অর্থাৎ এমন সব দৃশ্য, আচরণ বা প্রকাশ, যা অন্যের মানসিক, আবেগিক কিংবা নৈতিক সুস্থতার জন্য ক্ষতিকর।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, পরামর্শ সেশনে বারবার দেখা যাচ্ছে—এই দৃষ্টিগত দূষণ কিশোর–কিশোরীদের মাঝে নানা জটিলতা সৃষ্টি করছে। কেবল বাহ্যিক সাজ–পোশাক নয়, দোকানপাটে বিক্রেতার ব্যাবহার, রাস্তায় চলাফেরার ধরন, এমনকি সাধারণ ভোক্তা অভ্যাসও শিশু ও কিশোরদের মনে ভুল বার্তা তৈরি করতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে ধরা হয়েছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ধূমপান করা মানুষের কথা। তিনি হয়তো বুঝতেই পারেন না যে তাকে দেখে তিন বছরের একটি শিশু বাড়ি ফিরে পেন্সিলকে সিগারেটের মতো ধরে নকল শুরু করেছে—ঠিক মায়ের বর্ণনার মতোই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “শিশুরা যা দেখে, তাই শেখে”—এটাই প্রকৃত বাস্তবতা।

ধর্মীয় ও নৈতিক সমাজে আচরণের গুরুত্ব আরও বেশি। কারণ, এখানে আচরণের মধ্যেই নিহিত থাকে শিক্ষা। ইমামদের বাণীতেও বারবার এ কথা বলা হয়েছে—
“মানুষকে ভাষা দিয়ে নয়, কাজের মাধ্যমে সৎ পথে আহ্বান করো।”
অথচ বাস্তবে দেখা যায়, যিনি মুখে বলেন দুর্ব্যবহার খারাপ, তিনিই হয়তো দোকানে কটূ মন্তব্য করে কিশোরদের সামনে ভুল উদাহরণ তৈরি করছেন।

সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, মানুষের শেখার সবচেয়ে বড় মাধ্যম তার চোখ। ভালো আচরণ হৃদয়ে স্থায়ী ছাপ ফেলে, আর নেগেটিভ আচরণ তৈরি করে মানসিক দূষণ। তাই ব্যক্তি থেকে পরিবার, পরিবার থেকে বিদ্যালয়—সব ক্ষেত্রেই দরকার সচেতনতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং যৌথ দায়িত্ববোধ।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ছোট–বড় সবার আচরণগত দায়িত্ববোধ বাড়াতে পারলে সমাজে দৃষ্টিগত দূষণ কমবে; তৈরি হবে সুস্থ, সুষম ও চরিত্রগঠনমূলক পরিবেশ—যেখানে শিশুরা নিরাপদ এবং কিশোররা বিভ্রান্ত নয়, বরং অনুপ্রাণিত হয়ে বড় হবে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha